সময়ে বিনা নোটিশে নারী অভাবী
লেখকঃ আফরোজা সরকার
আসলে সময় একসময় সবকিছু পাল্টে দেয় একজন নারীর জীবনে। সময়ের কাছে সবকিছু খুবই তুচ্ছ, বিশ্বাস করুন, সব কিছুই তুচ্ছ। সবকিছুই বড্ড মূল্যহীন, এই সময় নামক চাকার কাছে। যা অবিরাম কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে নিজের মতোই আপন গতিতে ছুটতে থাকে, সময়ের কাছে মাথা নত করতে, আমরা প্রত্যেকেই করুণ বাধ্য।
মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক গড়া আবার তা বিচ্ছেদে রূপান্তরিত হওয়া সবকিছুতেই এই সময়ের একটা অদৃশ্য হাত থাকে। সময় এতোটাই শক্তিশালী যে, সম্পর্কের সাথে সাথে গড়ে ওঠা মানুষের অভ্যাসগুলোও এই সময়ের নিয়ন্ত্রনের সুতোয় ঝাপটে আবদ্ধ থাকে । সময় যেমন সবকিছু তুড়ি মেরে গড়ে তোলে আবার তেমনি এক নিমিষে সবকিছু পরিবর্তনও করে ফেলে। যেখানে হাজার চেষ্টা করলেও করার কিছুই থাকে না।
সময় যেমন নির্দয় মানুষের মনে হুট করে ভালোবাসার জন্ম দেয় তেমনি কোনো এক সময় বিনা নোটিশে সেই মানুষটাকেই ভালোবাসার অভাবী করে দেয়। সময় যেমন নানান নতুন নতুন অভ্যাস গড়ে তোলে তেমনি একসময় সেই অভ্যাসগুলো সময়মতো পরিবর্তনটাও করে ফেলে। সবকিছু একসময় ফিকে হয়ে গেলেও, এই সময় কখনও ফিকে হয়ে যায় না। তা নতুন আর সবসময় নবীনরূপেই থাকে।
সারাক্ষণ চারপাশ মাতিয়ে রাখা মানুষকে এই সময় একদিন নিবিড় নিরবতায় ফেলে দেয়, হাজার অভিযোগ করা মানুষকে এই সময় একদিন নিশ্চুপ করে দেয়, শ’খানেক প্রশ্ন করা মানুষকে একদিন ঠিকই এই সময় প্রচণ্ড ক্লান্ত করে দেয়, অফুরান কষ্ট বুকে চেপে হাসির অভিনয় করার শিক্ষাটাও এই সময়’ই আমাদের একসময় শিখিয়ে দেয়।
আসলেই, সময় সবকিছু একদম সময়মতে পাল্টে দেয়। আর এটাই করুণ সত্যি যে,
সময়কে আমরা বেঁধে রাখতে পারি না বরং সময়ই আমাদের তার সুতোয় বেঁধে রাখে।
সময়কে আমরা নিয়ন্ত্রন করতে পারি না বরং সময়’ই আমাদের নিয়ন্ত্রতনের রিমোট নিয়ন্ত্রন করে।
আর, আমাদের মতো সময় কখনও মানিয়ে নেয় না বরং সময়ের তাগিদেই আমরা আমাদের সময়মতো মানিয়ে নেই।
এই সময়ই আবর্তনে আজ আমরা কতো কি হারিয়েছি, কতো কিছু নতুন করেও পেয়েছি। কেউ আটকিয়ে রাখতে পারবো না এই সময় নামক যন্ত্রটাকে। সে তার নিজ গতিতে চলতেই থাকবে আর মাঝখানে পরিবর্তন আসবে জীবনের অনেক কিছু। একটা সময় বয়স হবে আমরা বুড়ো হবো, সেই দিন মনের অনেক জমে থাকা আখাংকা হয় তো হা হা করবে। সময়ের সাথে বিধাতার হাত নেই। সব কিছু নিয়তি।
সময় গেলে সাধন হয়না————–
অন্যদিকে মেয়েরা মেয়েদের শত্রু’——–
আজ থেকে সমস্ত নারী পোর্টালে লেখা ছেড়ে দিলাম। আমি নারী কোটায় আর কখনো লেখালিখি করবো না।
আমি মেয়ে, মেয়েদের সমতার জন্য লিখি, মেয়েদের অধিকারের জন্য লিখি, কিন্তু খুব সত্য কথা হচ্ছে আমার মেয়ে বান্ধবীর সংখ্যা খুব কম। ‘মেয়েরা মেয়েদের শত্রু’ বলে একটা টার্ম প্রচলিত আছে, সেটা আংশিক সত্য। কারণ আমি দেখেছি একটা মেয়ে ভালো কিছু করছে, সৃজনশীল কিছু করছে, কোনো ছেলে নয়, স্বয়ং একটা মেয়েই কুৎসা রটাচ্ছে।
বেশি দূরে যেতে হবেনা, আমার এক আত্মীয় মেয়ে আছে। সে ইঞ্জিনিয়ার, রুয়েট থেকে পাশ করেছে। একসময় কোথাও চাকরি পাচ্ছিল না। একদিন সে হতাশ গলায় বলল- কর্পোরেট অফিসের(সে একটি টেলিকম কোম্পানির নাম বলেছিল) বেশীরভাগ মেয়েরা বসদের তুষ্ট করে অন্যভাবে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে!
কিন্তু সে নিজেই যখন সেই কোম্পানিতেই চাকরি পেয়ে গেলো তখন চুপ করে গেলো! আমার ইচ্ছা ছিল একবার খোঁচা দিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করি- তুমিও কি বসকে তুষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছিলে?
আমি এইজন্য কেবল পুরুষদের মানসিকতা বদলাতে বলিনা, বলি পুরুষের সাথে নারীদের মানসিকতাও বদলাতে। নারীরা নিজেদের যতদিন বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, শক্তিতে, কর্মে, সৃজনে নিজেদের ছোটো মনে করবে ততদিন তাদের উন্নতি হবেনা। আর যাই হোক- নারী অধিকার আর নারী কোটা এক না। বাসের পাঁচটি সিট, চাকরির দশটি সিট- এসব নিয়ে আর যাই হোক, অধিকারবৃদ্ধি হবেনা। তবে করুণাবৃদ্ধি হলে হতে পারে!
সমানাধিকার মানে সম মানের অধিকার, সমানাধিকার মানে নিজের পাতে মাংস আর অন্যের পাতে ঝোল তুলে দেওয়া নয়! ঠিক আছে?
লেখকঃ
আফরোজা_সরকার
সাংবাদিক ও সংগঠক